খাদ্যের কাজ

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - গার্হস্থ্য বিজ্ঞান - খাদ্যের কাজ ও উপাদান | | NCTB BOOK

জীবনধারণের জন্য খাদ্য অপরিহার্য। খাদ্য থেকে প্রাপ্ত পুষ্টি উপাদানগুলোই আমাদের দেহে বিভিন্ন কাজ করে থাকে। আমাদের শরীরে খাদ্য গ্রহণের ফলে যে কাজগুলো সম্পন্ন হয় তা হলো

১। দেহ গঠন বৃদ্ধি সাধন

২। ক্ষয় পূরণ

৩। তাপ উৎপাদন কর্মশক্তি প্রদান

৪। দেহের অভ্যন্তরীণ কার্যাদি নিয়ন্ত্রণ

৫। রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা তৈরি

১। দেহ গঠন বৃদ্ধি সাধন- খাদ্যের মধ্যে অবস্থিত প্রোটিন দেহ গঠনের কাজ করে থাকে। শিশুর শরীর গঠনের জন্য পুষ্টি উপাদান গুরুত্বপূর্ণ। একটি মাত্র কোষ থেকে মায়ের পেটে শিশুর বৃদ্ধি ঘটে। কোষ পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ২টি কোষে বিভক্ত হয়। এভাবে আবার নতুন কোষ সৃষ্টি করে এবং পরবর্তীতে লক্ষ লক্ষ কোষ এবং আরও পরে কোটি কোটি কোষের সমন্বয়ে পূর্ণাঙ্গ মানব শিশুর জন্ম হয়। গর্ভাবস্থায় শিশুর বৃদ্ধির জন্য পুষ্টির প্রয়োজন হয়, অর্থাৎ খাদ্যের কাজ হলো শরীর গঠনের মাধ্যমে বৃদ্ধি সাধন করা। খাদ্যের মধ্যে অবস্থিত বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান এই কাজগুলো সম্পন্ন করে থাকে। -

২। ক্ষয় পূরণ প্রতিনিয়তই আমাদের শরীর ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে, আর এই ক্ষয়প্রাপ্ত দেহ পুনর্গঠন করার কাজও খাদ্যের। প্রতিনিয়তই পুরনো কোষের মৃত্যু ঘটে যার ফলে কিছু পুষ্টি উপাদান শরীর থেকে বের হয়ে যায় আর কিছু পুষ্টি উপাদান শরীরে থেকে যায় যা নতুন কোষ গঠনে অংশ নেয়। খাদ্য থেকে প্রাপ্ত পুষ্টি উপাদানের সাথে ওইগুলো যুক্ত হয়ে নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করে। আমরা যদি একজোড়া জুতা ক্রমাগত পরতে থাকি, তাহলে তার তলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। একসময় তা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যায়। কিন্তু জুতা ছাড়া যদি হাঁটা হয় তাহলে কিন্তু পায়ের তলা জুতার মতো ক্ষয় হয়ে যায় না। কারণ প্রতিনিয়তই মৃত কোষ বা ক্ষয়প্রাপ্ত কোষগুলোর জায়গায় নতুন কোষ তৈরি হচ্ছে এবং ক্ষয়পূরণের কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। এভাবে অসুস্থ থাকার পর বা আঘাতপ্রাপ্ত হলে নতুন কোষ তৈরির মাধ্যমে ক্ষতস্থানের ক্ষয়পূরণ ঘটে। তাই প্রত্যেক মানুষের শরীরেই খাদ্য হতে প্রাপ্ত পুষ্টি উপাদানগুলো এই ক্ষয়পূরণের কাজ করে শরীরকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করে।

দেহ গঠন বৃদ্ধি সাধন

ক্ষয় পূরণ

দেহের অভ্যন্তরীণ কার্যাদি নিয়ন্ত্রণ

খাদ্যের কাজ

তাপ উৎপাদন কর্মশক্তি প্রদান

রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা তৈরি

খাদ্যের কাজ

 

 

৩। তাপ উৎপাদন ও কর্মশক্তি প্রদান-একটি গাড়ির ইঞ্জিন চালানোর জন্য জ্বালানি হিসেবে পেট্রল বা গ্যাসের - প্রয়োজন হয়। এই জ্বালানি পুড়ে শক্তি তৈরি হয়, যার ফলে গাড়ি চলতে পারে। আমাদের শরীরকেও এই গাড়ির ইঞ্জিনের সাথে তুলনা করতে পারি। আমাদের শরীরে খাদ্যের মাধ্যমে প্রাপ্ত পুষ্টি উপাদানগুলো শরীরের কোষে জ্বালানির মতো পুড়ে শক্তি তৈরি করে। ফলে আমরা সচল আছি এবং বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পারছি। খাদ্য থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরে যে তাপশক্তি উৎপন্ন করে, তার ফলে আমরা কাজ করার ক্ষমতা অর্জন করি। বেঁচে থাকার জন্য রক্ত সঞ্চালন, শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ, খাদ্যের পরিপাক এবং মল-মূত্র ত্যাগ ইত্যাদি অত্যাবশ্যকীয় কাজ, যা সম্পাদন করতে শক্তির প্রয়োজন। যখন আমরা ঘুমিয়ে থাকি তখনও শক্তি খরচ হয়। শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা রক্ষার জন্য, টিসু গঠনের জন্য, শরীরের বিভিন্ন তরল তৈরি, মায়ের দুধ তৈরি, সব ধরনের অভ্যন্তরীণ কাজের জন্য শক্তি প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া চলাফেরা, খেলাধুলা, কথা বলা এবং সব রকমের বাহ্যিক কাজের জন্যও শক্তির প্রয়োজন।

৪। দেহের অভ্যন্তরীণ কার্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে -আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে থাকে, যার জন্য খাদ্যের প্রয়োজন হয়। খাদ্য গ্রহণের পর যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে থাকে তা হলো- শক্তি উৎপাদণের জন্য পুষ্টি উপাদান পুড়ে, পেশির সঞ্চালনের জন্য শক্তি ব্যবহৃত হয়, নতুন কোষ গঠন করে,বিভিন্ন ধরনের দেহ তরল উৎপাদন ও নিঃসরণ হয় ইত্যাদি। এই প্রক্রিয়াগুলোকে সম্পাদন করতে কিছু কিছু পুষ্টি উপাদান গুরুত্বপূর্ণ, যেমন- খাদ্যের ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, খনিজ লবণ, প্রোটিন ও পানি এগুলো বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া সংগঠিত করার কাজে সহায়তা করে। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন এনজাইম ও হরমোন উৎপাদনে বিভিন্ন প্রোটিন ও ধাতব লবণের ভূমিকা রয়েছে। এই এনজাইম ও হরমোনগুলো শরীরের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিক্রিয়া বা প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। অর্থাৎ দেহের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে ও বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় খাদ্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

৫। রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা তৈরি – প্রতিদিনই আমাদের শরীর বিভিন্ন ধরনের অণুজীব দিয়ে বা সংক্রামক - ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। এই আক্রমণের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করার জন্য চাই শরীরের নিজস্ব স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা। আর বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের ফলে এই রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা অর্জিত হয়। খাদ্যের প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ লবণ দেহের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা অর্জনে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণে শরীর সহজেই সুস্থ থাকে অর্থাৎ শরীরের সঠিক সুস্থতা রক্ষা হয়। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে অপর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণের ফলে পুষ্টির অভাব দেখা দেয়। পুষ্টির অভাবে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে যায় এবং বিভিন্ন ধরনের রোগের লক্ষণ দেখা যায় এবং সহজেই অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হলে কিছু কোষের মৃত্যু ঘটে এবং কখনো কখনো টিসুগুলো ধ্বংস হতে পারে। শরীরে নতুন কোষ গঠনের মাধ্যমে টিসুর ক্ষয়পূরণ করে থাকে, এক্ষেত্রে শক্তি, প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন হয়।

উপরের আলোচনা থেকে একথা বলতে পারি যে, খাদ্য শুধু ক্ষুধাই নিবৃত করে না, শরীরে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পাদন করে থাকে। তাই শরীর সুস্থ রাখতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।

 

কাজ – বিভিন্ন ধরনের খাদ্য আমাদের শরীরে কী কী কাজ করে থাকে তা ক্রমানুসারে সাজিয়ে লেখ ।

 

Content added By
Promotion